আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিক দল, জুলাই মাসের গণজাগরণের অংশগ্রহণকারীরা এই মাসের শেষ সপ্তাহে তাদের বহুল প্রত্যাশিত নতুন রাজনৈতিক দল চালু করতে যাচ্ছে এবং তারা একটি নতুন ছাত্র সংগঠনের ঘোষণাও দিতে পারে।
প্রাথমিকভাবে দল ও ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম নতুন দলে আহ্বায়ক বা সদস্য সচিব হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন।
এছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও প্রধান সংগঠক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করতে পারেন বলে নাগরিক ও ছাত্র মঞ্চের পাঁচজন নেতা দ্যা বাংলা পোস্টকে জানিয়েছেন।
নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদগুলি নিয়ে আলোচনা করতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দুটি প্ল্যাটফর্ম একাধিক বৈঠক করেছে।
তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঐকমত্য হয়েছে নাহিদ ইসলামই নতুন দলের আহ্বায়ক হবেন। তবে সবকিছুই নির্ভর করছে নাহিদের সিদ্ধান্তের ওপর,” বলেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় নাগরিক কমিটির দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
সরকারের অপর দুই ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমও এই দলে যোগ দিতে পারেন।
তবে গতি সঞ্চার করতে এবং আরও জনস্বার্থ আকৃষ্ট করতে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণার পর উপদেষ্টাদের রাজনৈতিক দলে যোগ দেওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে দুটি প্ল্যাটফর্ম আলোচনা করছে।
সূত্র জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন এবং এর আহ্বায়ক হাসনাত তার নিজ শহর কুমিল্লা থেকে জাতীয় নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন।
দলটির প্রধান সংগঠক আবদুল হান্নান মাসুদ ও সমন্বয়ক মাহিন সরকারও এই দলে যোগ দিতে পারেন এবং হান্নান হাতিয়া থেকে নির্বাচন করতে পারেন। প্ল্যাটফর্মের মুখপাত্র উমামা ফাতেমাও দলে যোগ দিতে পারেন এবং এমনকি সংসদে একটি আসনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন।
আখতার হোসেন বলেন, ‘আমরা মধ্যপন্থী মতাদর্শ নিয়ে দলকে নেতৃত্ব দেব- ডানপন্থীও নয়, বামপন্থী নয়। আমাদের আদর্শিক কাঠামো একটি মধ্যম স্থল থেকে সেট করা হবে।
আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিক দল: আহ্বায়ক কমিটি
দলের প্রাথমিক আহ্বায়ক কমিটি ৬০ থেকে ৭২ সদস্য বিশিষ্ট হবে এবং পরে কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্ব কাঠামো তৈরি করা হবে। এরই মধ্যে দল গঠনের প্রক্রিয়ার রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে বলে জানান তারা।
২০২৪ সালের আন্দোলনের আহত বিক্ষোভকারীদের পরিবারের আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য দলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে
অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের নৃশংস প্রতিক্রিয়ার শিকার ব্যক্তিরা যোগ করেন।
১৯৪৭, ১৯৭১ ও ২০২৪ সালের আন্দোলনের অনুপ্রেরণা সংযোজন করে দলের সনদের খসড়া প্রণয়নের জন্য ইতোমধ্যে ১৭ সদস্যের একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং কূটনীতিকরাও এই সনদ সম্পর্কে তাদের মতামত দিয়েছেন যাতে বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক রীতিনীতি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
সনদে অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার অঙ্গীকারের পাশাপাশি তরুণদের আকাঙ্ক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি সূত্র জানায়, দলের নাম এখনো চূড়ান্ত না হলেও এই দুই প্লাটফর্মের কমিটির মাধ্যমে ব্যাপক সাংগঠনিক কাজ করা হচ্ছে।
আম আদমি পার্টি ও লোক জনশক্তি পার্টি অব ইন্ডিয়া, ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ এবং শ্রীলঙ্কার ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার সহ দক্ষিণ এশিয়ার কয়েকটি যুব-ভিত্তিক দলের কাঠামো, অপারেশন এবং রাজনৈতিক অনুশীলনও তারা পরীক্ষা করে দেখছে।
ছাত্র, তরুণ পেশাজীবী, সাবেক আমলা, সাংবাদিক, আইনজীবী, ব্যবসায়ী নেতা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সুশীল সমাজের সদস্যদের সমন্বয়ে শতাধিক থানা ও ২৩৫টি উপজেলায় কমিটি গঠন করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা জেলা ও উপজেলাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ৫০টি কমিটি গঠন করে।
৬ ফেব্রুয়ারি দুটি প্ল্যাটফর্ম জনগণের কাছ থেকে তারা দলের কাছ থেকে কী চায় তা জানার জন্য দেশব্যাপী প্রচার শুরু করে।
‘নতুন বাংলাদেশের জন্য আপনার দৃষ্টিভঙ্গি’ স্লোগানের অধীনে জনসাধারণের কাছে পাঁচটি মূল প্রশ্ন রাখা হচ্ছে: “কোন তিনটি পদক্ষেপ দেশকে পরিবর্তন করবে বলে আপনি মনে করেন?”, “নতুন দল কোন ব্যক্তিগত সমস্যাগুলি সমাধান করবে বলে আপনি আশা করেন?”, “আপনি নতুন দলের কাছ থেকে কী আশা করেন?”, “দলের নাম কী হওয়া উচিত?”, এবং “দলের প্রতীক কী হওয়া উচিত?”
প্ল্যাটফর্মগুলো এ পর্যন্ত দুই লাখ মানুষের মতামত সংগ্রহ করেছে। প্রচারণা শেষে অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের কাছ থেকে মতামত সংগ্রহ করার লক্ষ্য রয়েছে তাদের।
প্রচারাভিযানের উত্তরদাতাদের দ্বারা প্রস্তাবিত নামগুলির মধ্যে রয়েছে পিপলস রেভোলিউশন পার্টি, পিপলস পাওয়ার পার্টি, ইউনাইটেড রেভোলিউশন পার্টি, ইউনাইটেড পিপলস পার্টি, ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বিপ্লবী পিপলস পার্টি, ডেমোক্রেটিক পিপলস পার্টি, জুলাই স্পিরিট পার্টি এবং সিভিক ডেমোক্র্যাটিক পার্টি।
নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গ বিশেষ করে যারা খুন, চাঁদাবাজি ও জুলাই মাসের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তারা নতুন দলে যোগ দিতে পারবেন না।
তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও বামপন্থী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের লোকজনকে এতে যোগ দিতে স্বাগত।
আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিক দল: থাকবে ছাত্র সংগঠন
দলের পাশাপাশি ঘোষিত হতে যাওয়া এই ছাত্র সংগঠনটি কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি আহ্বায়ক কমিটিও ঘোষণা করা হতে পারে।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৭১ বা ২০১ সদস্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কিছুটা ছোট হবে।
স্টুডেন্টস এগেইনস্ট ডিসক্রিমিনেশনের দু’জন মূল সমন্বয়কারী ছাত্র সংগঠনে নেতৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেন। তারা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবু বকর মজুমদার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্নাতকোত্তরের ছাত্র আবদুল কাদের।
প্ল্যাটফর্মের অন্যান্য সমন্বয়ক রাশিদুল ইসলাম রিফাত, হাসিব আল ইসলাম ও জাহিদ আহসানও নতুন ছাত্র হতে পারেন।
কেন্দ্রীয় ও ঢাবি প্যানেল গঠনের পর সারাদেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় কমিটি গঠন করা হবে।
ছাত্রনেতারা বলেন, নতুন ছাত্র সংগঠন নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মতাদর্শগতভাবে ঐক্যবদ্ধ হলেও স্বাধীন ও স্বায়ত্তশাসিত থাকবে।
সদস্যদের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা 27-28 বছর নির্ধারণের পরিকল্পনা রয়েছে, পাশাপাশি একটি নিয়ম রয়েছে যে স্নাতক প্রোগ্রামে ভর্তির সাত বছর পরে তারা ছাত্র সংস্থায় থাকতে পারবেন না।
আবদুল কাদের বলেন, ‘নতুন ছাত্র সংগঠন জুলাই মাসের অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা সমুন্নত রেখে সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক কাজ করবে।