আপনি অফিসে বসে থাকলেও দ্রুত ত্বকের যত্ন নিতে পারেন ! অবাক হচ্ছেন? সময় বদলায়, আমাদের জীবনযাত্রারও পরিবর্তন হয়। ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও আজকাল কোনো কিছুতেই পিছিয়ে নেই। মেয়েরা এখন বাসা ম্যানেজ করা ছাড়াও অফিস আদালত সবকিছু একই গতিতে করে। আচ্ছা! আমরা বেশিরভাগ সময়ই দিন এবং রাতের স্কিন কেয়ার নিয়ে কথা বলি। কিন্তু আমাদের যাদের কাজের তাগিদে বেশিভাগ সময়ই দিনে বাইরে বা অফিসে থাকতে হয় তারা কি স্কিন কেয়ার করবেন না? এমন কোন কথা কি কখনও শুনেছেন যে, অফিসের কাজে থাকলে স্কিনের যত্ন নেয়া যাবেনা?
এমনকি আপনি যখন কাজ করছেন, তখনও আপনি আপনার ত্বকের যত্ন নিতে সময় নিতে পারেন। আমরা বাইরে যাওয়ার আগে, আমরা কিছু মেকআপ করি। তবে এই মেকআপ সারাদিন পরা ঠিক নয়। সানস্ক্রিন পুনরায় প্রয়োগ করাও গুরুত্বপূর্ণ। আজকের নিবন্ধটি এমন লোকদের জন্য যারা নিজেদেরকে প্রশ্ন করেন, “আমি সারাদিন অফিসে থাকি, কিন্তু আমার ত্বকের মৌলিক যত্নের যত্ন কিভাবে নেওয়া উচিত?” চলুন দেখে নেওয়া যাক কিছু দ্রুত এবং সময় সাশ্রয়ী ত্বকের যত্নের প্রয়োজনীয়তা যা আপনি অফিস থেকে পেতে পারেন।
একটি ভাল ত্বক পরিচর্যার পদক্ষেপগুলি কী কী?
অফিসে একটি দ্রুত প্রাথমিক ত্বকের যত্নের রুটিন কেমন হবে তা জানার আগে, সারা দিন স্বাভাবিক ত্বকের যত্ন বজায় রাখার জন্য সঠিক প্রাথমিক ত্বকের যত্নের পদক্ষেপগুলি দেখে নেওয়া যাক। কারণ অফিসে দ্রুত প্রাথমিক চিকিত্সার আগে, ত্বকের যত্নের প্রাথমিক বিষয়গুলি জানা গুরুত্বপূর্ণ।
দৈনিক প্রাথমিক ত্বকের যত্ন
- ক্লিনজিং (ত্বকে প্রসাধনী প্রয়োগ করার সময়, ডবল ক্লিনজিং প্রয়োজন)
- এক্সফোলিয়েট (সপ্তাহে অন্তত 2-3 বার)।
- টোনিং (পরিষ্কার করার পর দিনরাত করতে হবে)
- আর্দ্রতা
- সানস্ক্রিন (সারা দিন পুনরায় প্রয়োগ করতে হবে)
- ফেস মাস্ক বা প্যাক (আপনার সাপ্তাহিক ত্বকের যত্নের রুটিনে মাস্ক বা প্যাক অন্তর্ভুক্ত করুন)
- সিরাম প্রয়োগ করুন (20 বছর বয়সের পরে, সমস্যার উপর নির্ভর করে সিরাম প্রয়োগ করা ভাল)
অফিসে ত্বকের যত্ন নিয়ে কী করবেন?
আপনি যখন প্রথম সকালে ঘুম থেকে উঠবেন, আপনার ত্বকের ধরণের জন্য উপযুক্ত একটি ফেসিয়াল ক্লিনজার ব্যবহার করুন। এতে আপনার মুখ পরিষ্কার দেখাবে। ময়েশ্চারাইজার এবং সানস্ক্রিন অনুসরণ করুন। এছাড়াও, যারা মুখের মেকআপ সম্পর্কিত কিছু ব্যবহার করতে চান তারাও এই সময়ে এটি ব্যবহার করতে পারেন। যাইহোক, কাজের সময় আমাদের ত্বকের বিশেষ যত্ন নেওয়ার দরকার না হলেও কিছুক্ষণ পর পর আমাদের মুখ শুকিয়ে যায়। তখন সানস্ক্রিন পুনরায় প্রয়োগ করার সময়। অতএব, প্রাথমিক ত্বকের যত্নের জন্য সেরা সময় হল দুপুরের খাবারের পর। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন তারা আবার সানস্ক্রিন কেন ব্যবহার করছেন। হ্যাঁ, অবশ্যই, চলুন আগে তাই জেনে নেয়া যাক।
দিনের বেলা সানস্ক্রিন রি-অ্যাপ্লাই করা।
খেয়াল করে দেখবেন সানস্ক্রিনে এসপিএফ (SPF) কথাটি মেনশন করা থাকে। কারণ, এসপিএফ (SPF) মানে হলো- সান প্রটেকশান ফ্যাক্টর (Sun Protection Factor)। এবং এই এসপিএফ (SPF) এর উপরেই নির্ভর করে আপনার সানস্ক্রিন সান ড্যামেজ থেকে আপনার স্কিনকে কত সময়ের জন্যে সুরক্ষা দিতে পারবে। যখন কেউ এসপিএফ (SPF) ১৫ এর একটি সানস্ক্রিন ইউজ করে সেক্ষেত্রে, সে এসপিএফ (SPF) ১৫ কে ১০ দিয়ে গুণ করবে। গুণ করে যত মিনিট পাওয়া যাবে, সে ততো সময়ের জন্যে সূর্যরশ্মি থেকে প্রটেকটেড থাকবে। ফলাফল আসে ১৫০ মিনিট। অর্থাৎ ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটের জন্যে আপনি নিশ্চিন্ত!
ঠিক এভাবেই, যে যেই এসপিএফ (SPF) ব্যবহার করছেন তাকে ১০ দিয়ে গুণ দিলেই পেয়ে যাবেন আপনি কতক্ষণ ইউভি বি সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষিত আছেন। মূলত, এই কারণেই সানস্ক্রিন বাছাই করার সময় অনেকেই বেশি এসপিএফ (SPF) যুক্ত সানস্ক্রিন প্রেফার করে থাকে। তাই, বাইরে বের হলে তাই চেষ্টা করবেন বেশি এসপিএফ (SPF) যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে। যাইহোক, এবার ফিরে যাব অফিসে বেসিক স্কিন কেয়ারের ধাপ গুলোতে। এর জন্যে জাস্ট কয়েকটি প্রোডাক্ট ব্যাগে রাখলেই যথেষ্ট। যেমন,
- স্কিনের ধরণ অনুযায়ী একটি ফেইসওয়াশ
- ময়েশ্চারাইজার
- সানস্ক্রিন
- লিপবাম
(১) দুপুরের খাবারের পর ফেইসওয়াশ দিয়ে মুখটা ভালভাবে ক্লিন করে নিন
আপনি যদি বের হওয়ার সময়, এসপিএফ (SPF) ৩০ যুক্ত কোন সানস্ক্রিন ব্যবহার করে থাকেন তাহলে, হিসাব অনুযায়ী ৫ ঘণ্টা পর এর স্কিনকে প্রটেক্ট করার ক্ষমতা কমে আসবে। তাই, ৫ ঘণ্টা পর সানস্ক্রিন রি-অ্যাপ্লাই করতে হবে। কিন্তু সানস্ক্রিন রি-অ্যাপ্লাই করার আগে মুখটা অবশ্যই ফেইসওয়াশ দিয়ে ভালভাবে ক্লিন করে নিতে হবে। কারণ, এতে মুখ পুনরায় স্কিন কেয়ারের জন্যে রেডি হবে।
(২) স্কিনকে হাইড্রেটেড রাখতে ময়েশ্চারাইজার মাস্ট
ময়েশ্চারাইজারের কাজ কী? ময়েশ্চারাইজারের প্রথম কাজই হলো, স্কিন ড্রাই হয়ে এলে তাতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করা। এবং স্কিনকে হাইড্রেটেড রাখা। তাই, মুখটা ভালভাবে ফেইসওয়াশ দিয়ে ক্লিন করার পর পরই একটা ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করে নিতে হবে। অর্থাৎ, ময়েশ্চারাইজারের প্রয়োজনীয়তা সকল স্কিনের জন্যেই অপরিহার্য। তবে, ড্রাই স্কিনের জন্যে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। ময়েশ্চারাইজার আমাদের স্কিনের বাইরে একটি লেয়ার তৈরি করে। এতে বাইরের ক্ষতিকর জীবাণু এবং ধুলাবালি সহজেই স্কিনের ক্ষতি করতে পারেনা। এসকল কারণেই, অফিসে বেসিক স্কিন কেয়ারে একটি ময়েশ্চারাইজার রাখা মাস্ট।
(৩) দিনের বেলা সানস্ক্রিন রি-অ্যাপ্লাই করতে ভুলবেন না
আগেই বলেছি, কেন সানস্ক্রিন রি-অ্যাপ্লাই করাটা জরুরী। অফিসে থাকলেও সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করে নিতে হবে। একটি ভাল ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের পর পরই স্কিন টাইপ অনুযায়ী মুখে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করে নিন। অনেকেই বলতে পারেন, আমিতো অফিসেই থাকি! বাইরের আলো মুখে লাগছেনা! তাও অফিসে বসে সানস্ক্রিন রি-অ্যাপ্লাই করতেই হবে?
-হ্যাঁ, অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। দিনের বেলায় আপনি যেখানেই থাকেন সূর্যের আলো কিন্তু কোন না কোন ভাবে আপনাকে স্পর্শ করছেই। তাই দিনের বেলায় আপনি বাইরে থাকুন বা বাসার ভেতরে বা অফিসে, সানস্ক্রিন ব্যবহার করা আবশ্যক!
(৪) ঠোঁটকে ইনস্ট্যান্ট ময়েশ্চারাইজড এবং সফট করতে লিপবাম
অফিসে কম বেশি আমরা সবাই ঠোঁটে কিছুনা কিছু অ্যাপ্লাই করেই থাকি। তাইনা? ফেইসে কিছু ব্যবহার না করলেও লিপস্টিক দেয়া হয়ই। অনেক সময় সারাদিন ঠোঁটে লিপস্টিক রাখার ফলে, লিপস্টিক ক্র্যাক করে আবার ঠোঁট ফাটার মত সমস্যাও দেখা দেয়। তাই, ফেইস ক্লিন করার পর ঠোঁটকে ময়েশ্চারাইজড এবং সফট রাখতে একটি লিপবাম অ্যাপ্লাই করে নিন। এরপর চাইলে আবার লিপস্টিক অ্যাপ্লাই করে নিতে পারেন।