নিউমোনিয়া
Freepik freepik

শিশুর নিউমোনিয়া হলে কি ভাবে বুঝবেন?

আমাদের দেশে শিশুর জন্ম পরই শিশুদের কিছু রোগ নিয়ে বাবা মায়েরা বেশ আতঙ্কে থাকেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে নিউমোনিয়া। আমাদের দেশে প্রতি বছরই বিপুল সংখ্যক শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় এবং এদের মধ্যে অনেক শিশুর মৃত্যু হয়। এছাড়াও নিউমোনিয়া পরবর্তী নানা জটিলতার দীর্ঘমেয়াদী সমস্যাতেও শিশুরা ভোগে।  শিশু যেন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত না হয় সেজন্য আগে থেকেই সচেতন হতে হবে। আক্রান্ত হলে সঠিক সময়ে চিকিৎসা করতে হবে। কিন্তু কীভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কিনা? আজকের আর্টিকেলে জানাবো শিশুদের নিউমোনিয়া হওয়ার কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সম্পর্কে।

নিউমোনিয়া কী?

নিউমোনিয়া
Freepik freepik

নিউমোনিয়া মূলত ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি সমস্যা। এর ফলে ফুসফুস ও শ্বাসযন্ত্র আক্রান্ত হয়। ইংরেজিতে একে বলে রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (Respiratory tract infection)। নিউমোনিয়া হলে শিশুর স্বাভাবিক শ্বাস প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় এবং নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসার অভাবে শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বর্ষাকাল ও শীতকালে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

যে সকল কারণে এ রোগে আক্রান্ত হয়?

শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া রোগটির সংক্রমণ মূলত বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকজনিত কারণে হয়ে থাকে। যে সব ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস থেকে নিউমোনিয়া রোগটির সংক্রমণ ঘটে-

  • স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি
  • গ্রুপ বি স্ট্রেপ্টোকক্কাস
  • স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস
  • প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
  • ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস
  • অ্যাডেনোভাইরাস

যে সব শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি?

  • শিশু চরম অপুষ্টির শিকার হলে
  • সংক্রামক রোগ যেমন- হাম, হুপিং কাশিতে আক্রান্ত শিশু
  • যেসব শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম
  • জন্মগতভাবে হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের রোগে আক্রান্ত শিশু
  • সদ্যোজাত শিশু

নিউমোনিয়ার লক্ষণ 

শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কিনা তা কয়েকটি লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

লক্ষণগুলো হচ্ছে-

  • অন্যান্য রোগগুলোর মতো নিউমোনিয়াতেও প্রথমে সাধারণত জ্বর দেখা যায়। সেই সাথে ঘাম, ঠান্ডা ও অস্বস্তি হতে পারে।
  • শিশুর খাবার ইচ্ছা কমে যাবে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে কম উদ্যমী মনে হতে পারে অর্থাৎ হাত পা কম নড়াচড়া করবে।
  • কাশি হতে পারে এবং এই কাশির সাথে শ্লেষ্মা বা মিউকাস তৈরি হয়।
  • শিশু ও ছোট বাচ্চাদের ফ্যাকাশে দেখা যায়। এছাড়াও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কান্না করতে পারে।
  • ঘন ঘন বমি বা ডায়রিয়াও হতে পারে।
  • শিশু গুরুতর অসুস্থ হলে খাবার খাওয়া এবং পানি পান করার সময় প্রচন্ড অনীহা ভাব দেখায়। এর পাশাপাশি অচেতন ভাব, হাইপো থারমিয়া (এ সমস্যায় শরীরের তাপমাত্রা ৯৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে নেমে আসে) এবং খিঁচুনি থাকতে পারে।
  • শরীরে অক্সিজেন খুব বেশি কমে গেলে শিশু মাথা ঝাঁকাবে এবং তীব্র অবস্থায় ঘড়ঘড় আওয়াজ করতে থাকবে। অক্সিজেনের অভাবে শিশুর শরীর নীল হয়ে যেতে পারে।

নিউমোনিয়া হলে কোন বয়সী শিশু কতবার শ্বাস নিতে পারে?

শিশুর বয়স-

  • ০-২ মাস হলে প্রতি মিনিটে ৬০ বারের বেশি শ্বাস নিবে
  • ২-১২ মাস হলে মিনিটে ৫০ বারের বেশি শ্বাস নিবে
  • ১-৫ বছর হলে মিনিটে ৪০ বারের বেশি শ্বাস নিবে

এভাবেই নিউমোনিয়া নির্ণয় করা হয়। এছাড়া ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত নিউমোনিয়া পরীক্ষা করার জন্য এক্স-রে, রক্ত ​​এবং অন্যান্য পরীক্ষা করতে হবে।

নিউমোনিয়া প্রতিরোধ 

শিশুদের নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করাকেই শিশুমৃত্যু কমানোর একমাত্র উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিরোধের জন্য যে বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে-

  • এইচ আই ভি, নিউমোকক্কাস, হাম ও হুপিং কাশির টিকা দেওয়া নিউমোনিয়া প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এক বছরের মধ্যে সময়মতো শিশুর সব টিকা, বিশেষ করে নিউমোনিয়ার টিকা দিতে হবে।
  • ছয় মাসের কম বয়সী শিশু যদি টানা ৬ মাস বুকের দুধ পান করে তবে নিউমোনিয়ার জীবাণু অনেকটাই প্রতিহত করতে পারবে। ছয় মাসের বেশি হলে বুকের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার হিসেবে ঘরে তৈরি খাবার খাওয়াতে পারলে ভালো। বুকের দুধ নিউমোনিয়া প্রতিরোধে কার্যকরী হওয়ার পাশাপাশি শিশুর অসুস্থতার মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে।
  • বায়ু দূষণের মতো পরিবেশগত কারণগুলো মোকাবেলা করতে পারলে এ রোগের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। যেমন- ধোঁয়া হয় না এমন উন্নত ঘরোয়া চুলা ব্যবহার করা, কোলাহলপূর্ণ জায়গায় ভালোভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ইত্যাদি।
  • এইচ আই ভি সংক্রমিত শিশুদের মাঝে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই ধরনের শিশুদের ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিন অ্যান্টিবায়োটিক কোট্রিমক্সাজল দেওয়া উচিত।
  • শিশুকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অন্য কোনো শিশু অথবা হাঁচি-কাশি আক্রান্ত লোকের কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে। শিশু যেন ধুলাবালির সংস্পর্শে না আসে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

চিকিৎসা

নিউমোনিয়া যদি ব্যাকটেরিয়া থেকে হয়, তাহলে শিশুকে সুস্থ করার জন্য শিরায় অথবা মুখের অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে। শিশু যদি ভালোভাবে তরল পান করতে না পারে তখন শিরায় অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। অক্সিজেন থেরাপি দিতে হবে।

বড়দের তুলনায় শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই শিশুর যত্ন নেওয়ার সময় সতর্কও থাকতে হয় বেশি। গরম ও ঠান্ডা দুই সময়েই খেয়াল রাখতে হবে শিশুর যেন অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম না লাগে। সচেতন থাকলে শিশুর নিউমোনিয়া হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।

সর্বাধিক ভিউ

মাদ্রিদের আয়না ঘরে তাদেরকেই বদ করল বার্সালোনা

রান্নাঘর পরিষ্কার ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখার কার্যকরী টিপস

রান্নাঘর পরিষ্কার ও দুর্গন্ধমুক্ত রাখার কার্যকরী টিপস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  

সর্বশেষ খবর

মুন্নী সাহা গ্রেফতার ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায়
রাজনীতি সর্বশেষ খবর

মুন্নী সাহা গ্রেফতার ছাত্র-জনতা হত্যা মামলায়

ক্রিপ্টো বস ৭৫ কোটি টাকা কেনা কলার শিল্পকর্ম খেয়ে ফেললেন
আন্তর্জাতিক বিনোদন

ক্রিপ্টো বস ৭৫ কোটি টাকা কেনা কলার শিল্পকর্ম খেয়ে ফেললেন

শ্রীলঙ্কার টেস্ট ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৪২ রানে অলআউট, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় লজ্জা
খেলাধুলা

শ্রীলঙ্কার টেস্ট ইতিহাসে সর্বনিম্ন ৪২ রানে অলআউট, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় লজ্জা

লাওসে বিদেশি পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় ৮ হোস্টেল কর্মী গ্রেফতার
আন্তর্জাতিক

লাওসে বিদেশি পর্যটকের মৃত্যুর ঘটনায় ৮ হোস্টেল কর্মী গ্রেফতার

কানাডা সীমান্তকে হুমকি মনে করছেন ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক

কানাডা সীমান্তকে হুমকি মনে করছেন ট্রাম্প

(NOC) মঞ্জুর “বিবিএল খেলতে যাচ্ছেন রিশাদ!
খেলাধুলা

(NOC) মঞ্জুর “বিবিএল খেলতে যাচ্ছেন রিশাদ!