সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সাংসারিক জীবনের খুঁটিনাটির বিষয় গুলো দূরে রাখুন না হলে আপনার দাম্পত্য জীবনে নেমে আসবে অনেক অশান্তি। সব কিছুরই যেমন ভালো দিক আছে, তেমনি কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে কোন কিছু শেয়ার করাটা অবশ্যই খারাপ না। তবে রিয়েল লাইফের চেয়ে বেশি ভার্চুয়াল লাইফে নির্ভরশীল হয়ে যাওয়াটা ব্যক্তি এবং সাংসারিক জীবনের জন্যে খুবই নেতিবাচক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন আমাদের জীবনের অংশ। তবে আমাদের জীবনসর্বস্ব হয়ে ওঠায় এটি আমাদের ব্যক্তিগত ও সাংসারিক জীবনে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে রাখতে হবে সংসার জীবনের সব খুঁটিনাটি।
সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যম কিভাবে সাংসারিক জীবনের প্রভাব ফেলে।
১। ভার্চ্যুয়াল সম্পর্কের কাছে হেরে যেতে হয় প্রিয়জনকে।
মনে করুন, আপনার হাসব্যান্ড বা ওয়াইফ তার জমানো টাকা দিয়ে খুব কষ্ট করে আপনাকে একটি মোবাইল গিফট করলো। আপনি অনেক খুশি! কিন্তু গিফট-টা হাতে নিয়েই ভাবছেন সুন্দর একটা ক্যাপশন দিয়ে পোস্ট না করলে সবাইকে বুঝাতে পারবেন না আপনি কতটা খুশি! মোবাইল হাতে নিয়েই আপনি ছবি তোলায় আর কী ক্যাপশন দিবেন তা নিয়ে ভাবতে ব্যস্ত। অথচ, অন্যদিকে আপনার প্রিয়জন হয়তো চাচ্ছিলো তার কষ্ট করে টাকা জমানোর কাহিনীটা আপনাকে শুনাতে অথবা আপনাকে দেয়া সারপ্রাইজ এর প্ল্যানটা আপনাকে বলতে। আপনি যখন এমন মানুষগুলোকে নিয়ে ব্যস্ত যারা আপনার হাতের ওই মুঠো ফোনটায় বন্দী। তখন হয়তো, আপনার প্রিয় মানুষটির “থাক পরে বলবো” গল্পটা আপনাকে আর কোনোদিন শোনানো হয় না। এভাবেই কাছের মানুষগুলো থেকে একটু একটু করে বাড়তে থাকে দূরত্ব!
২।অন্যের চিন্তা ভাবনা কি ভাবে আপনার জীবনে মানসিক অশান্তির সৃষ্টি করে।
আমার বা আপনার কাছে যে বিষয়টি খুব স্বাভাবিক, অনেকের কাছেই তা নেতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি করতে পারে। সেখান থেকে তৈরি হতে পারে হিংসা, কথা কানাকানি, এমনকি অনেকে আপনার দোষ ধরায় ব্যস্ত হয়ে যাবে। এর প্রভাব আপনার ব্যক্তিজীবন এবং সংসার জীবনে পরবেই। নেগেটিভ কমেন্ট অনেকেই সহজভাবে মেনে নিতে পারেন না! আর সঠিকভাবে সামাল দিতে না পারলে এগুলোই হয়ে দাঁড়াবে আপনার মানসিক অশান্তির কারণ।
৩।আপনার সাংসারিক দন্দ থেকে অন্যেরা মজা নিতে পারে
মনে করুন, স্কুল কলেজে আপনার ক্লাশে যে কয়জন ক্লাশম্যাট ছিলো তারা সবাই কি আপনার বন্ধু ছিলো বা এখনও আছে? পড়া না পারার কারণে যেদিন টিচারের কাছে কড়া বেতের মারটি খেয়েছিলেন, আপনার ওই দুর্দশায় পুরো ক্লাশ কি আপনার জন্যে ব্যথিত হয়েছিলো? অবশ্যই না! তাই না? ফেইসবুকের ফ্রেন্ডলিস্ট-টাও একেবারেই সে রকম। এখানে যদিও বলা হয় “ফ্রেন্ডলিস্ট” তবে আসল বন্ধুদের নামের লিস্ট হাতে গোণা কয়টাই। আপনি যখন খুব কষ্ট পেয়ে সাংসারিক কলহ নিয়ে কোন একটা পোস্ট দিচ্ছেন তখন হয়তো অনেকেই তার স্ক্রিনশট কোন গ্রুপে দিয়ে “দেখছিস! বলছিলাম না? ভালো হইছে!” বলে আপনার পিছনে পিছনে তা নিয়ে খুশি হচ্ছে বা মজা নিচ্ছে।
৪। আপনার খুশি বা আনন্দ অনেকে নেগেটিভ ভাবেও নিতে পারে
আমাদের জীবনে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা আসলেও আমাদের সুখ দেখে আনন্দ পায় এবং আমাদের খারাপ সময়ে আমাদের মতই কষ্ট পায়। তবে দুর্ভাগ্য হলেও সত্যি যে, এমন মানুষের সংখ্যা নেহায়েত-ই হাতে গোনা কয়েকজন। আপনি যখন আপনার কাছের কোন প্রিয়জন যেমন, হাসব্যান্ড, ওয়াইফ, বাবা-মা, ভাই-বোন বা বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে কোন সুন্দর সময়ের ছবি দিচ্ছেন, ঠিক একই সময় যে মানুষটি আপনাকে দেখছে সে হতে পারে তার ব্যক্তিগত জীবনে খুবই একা। আপনি না চাইলেও আপনার শেয়ার করা ওই পোস্টটি হতে পারে কারো শূন্যতা মনে করিয়ে দেয়ার কারণ। সে হয়তো চাইলেও আপনাকে ইতিবাচক ভাবে নিতে পারছেনা। এভাবেও কিন্তু তৈরি হতে পারে দূরত্ব।
৫। স্বামী- স্ত্রীর মধ্যকার বিষয় দুইজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন
আমরা অনেকেই সংসারের খুঁটিনাটি, এমন কী পান থেকে চুন খসলেও তা পরিবার বা বন্ধুদের বলতে ব্যস্ত হয়ে যাই। একসাথে থাকতে গেলে ভালো খারাপ এমন অনেক কিছুই ঘটবে। আজকে খারাপ কালকে ঠিকও হয়ে যাবে। কিন্তু আপনি যাকে আপনার কথাগুলো শেয়ার করছেন তিনি হয়তো আপনার কাছের মানুষটিকে আর আগের চোখে দেখবে না বা সম্মান করবে না। আপনি পরে চাইলেও তা আর পরিবর্তন করতে পারবেন না। তাই সংসারের ভালো মন্দ যেকোনো কিছুই চেষ্টা করুন স্বামী- স্ত্রীর দুইজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে।
৬। কেয়ারফুল
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম আমরা আমাদের সুবিধার জন্যে ব্যবহার করতেই পারি। তবে যা যেন কোন ভাবেই আমাদের ব্যক্তিগত এবং সাংসারিক জীবনে ক্ষতির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়, সেটাও ইনশিওর করতে হবে আমাদেরকেই। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে আমরা আরও কেয়ারফুল হবো, এমনটাই আশা করি। ভালো থাকবেন।